1. adminbackup@wordpress.org : adminbackup :
  2. bangladak24.news@gmail.com : বাংলা ডাক : সাপ্তাহিক বাংলা ডাক
  3. info@www.bangladak.com : বাংলা ডাক :
শুক্রবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৬:১৭ অপরাহ্ন
নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি :
সাংবাদিকতা যাঁদের স্বপ্ন, তাঁদের জন্য দুর্দান্ত সুযোগ! "বাংলা ডাক" সংবাদপত্রে জরুরী ভিত্তিতে সাংবাদিক নিয়োগ চলছে। আপনার জীবনবৃত্তান্ত,  শিক্ষাগত যোগ্যতার সনদ, জাতীয় পরিচয় পত্র, নাগরিকত্বের সনদ, ২ কপি সদ্য তোলা রঙিণ ছবি এবং তথ্য প্রমাণসহ সংবাদ আজই পাঠিয়ে দিন! যোগাযোগ...ই-মেইল: bangladak.news@gmail.com  

ভাষার কথা

প্রতিনিধি
  • প্রকাশিত: শনিবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৫

ভাষা আন্দোলন সত্যিকার অর্থে শুরু হয় একাদশ-দ্বাদশ শতাব্দীতে, সেন রাজবংশের সেই বিধান ‘অষ্টাদশ পুরনানী রামস্য চরিতানীচ ভাষায়ং মানব শ্রুতা রৌরবং নরকং ব্রজেত’ ঘোষণার মধ্য দিয়ে বাংলা ভাষার ওপর নেমে এলো অবর্ণনীয় দমন-পীড়ন। ফলে দ্রুতই নিজ গৃহ থেকে উৎখাত হয়ে গেল বাংলা। যারা পারল তারা পাহাড়ে-জঙ্গলে, তিব্বতে-নেপালে পালিয়ে প্রাণ বাঁচাল। পারল না যারা, তারা শিকার হলো গণহত্যার। যে কারণে বাংলা ভাষার একটা অক্ষরও বাংলাদেশের মাটিতে পাওয়া যায়নি। পাহাড়পুর, ময়নামতী ও লালমাই বৌদ্ধবিহারকে যারা ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছিল, তাদেরই নিষ্ঠুরতার নিচে হারিয়ে গেল বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের সব নিদর্শন। ৬৫০ থেকে ১২০০ সাল পর্যন্ত বাঙালিরা সাহিত্যে কী কী করেছিল তার একটা নজিরও আমাদের হাতে ছিল না। ফলে আত্মানুসন্ধানে হরপ্রসাদ শাস্ত্রীকে বারবার ছুটে যেতে হয়েছে হিমালয়ে। সেখান থেকে কুড়িয়ে-টুড়িয়ে জোগাড়যন্ত্র করে আনতে হলো বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের আদি নিদর্শন-চর্যাপদকে। সেগুলোও আবার ঠিক সাহিত্য নয়, বৌদ্ধতান্ত্রিকদের সাধনার গান।

ত্রয়োদশ-চতুর্দশ শতাব্দীতে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের রক্ষক ও পালনকর্তার ভূমিকায় আবির্ভূত হলেন মুসলিম শাসকরা। ড. দীনেশচন্দ্র সেন, ড. মুহাম্মদ এনামুল হকের ভাষায় তারাই বটতলা, হাটতলা থেকে বাংলাকে উদ্ধার করে, তার শিরায়-সন্ধিতে, দেহে-আত্মায় সঞ্চার করলেন প্রাণপঙ্ক। তারই ফলে বাংলা ভাষা প্রথমবারের মতো স্থান পেল শাহী দরবারে। অর্জন করল আভিজাত্য। রাষ্ট্র তার পৃষ্ঠপোষক। তাই তো ভ্রূণদশা থেকে তার ঘটল মুক্তি। সে পরিণত হলো সাবালকে। হয়ে উঠল পূর্ণ সাহিত্য। শত শাখা-প্রশাখায় পল্লবিত-পুষ্পিত ও কল্লোলিত হয়ে উঠল বাংলা। তার অন্তর থেকে নেমে এলো বৈষ্ণব পদাবলীর অঝোর আষাঢ়। মঙ্গল কাব্যের মঙ্গলময়তা। রোমান্টিক প্রণয়োপাখ্যানের মানবিক হৃদয় কাহিনির অগণন নক্ষত্রখচিত আকাশ। নাথ সাহিত্য, মর্সিয়া সাহিত্য, রূপকথা, ময়মনসিংহ গীতিকা, বাউল বিশ্ব, ছড়া, লোককথা, ব্রতকথা, মন্ত্র। সূদূর আরাকানে মহাকবি আলাওলের মহিমাময়তার পরই কৃষ্ণনগরে ভারতচন্দ্র উন্মোচন করলেন বাঙালির চিরন্তন আকুলি।

তারপর এলো ফোর্ট উইলিয়ামের যুগ। বাংলাকে তার নিজ বাগান থেকে উপড়ে এনে সংস্কৃতপণ্ডিত ও শাদা সাহেবরা একটা কৃত্রিম টেস্টটিউব বেবির জন্ম দিলেন। সেটাই আজকের প্রমিত বাংলা ভাষা। এ অনাচারের বিরুদ্ধে নজরুলের ভাষা বিদ্রোহ তাই সবিশেষ গুরুত্ব ও তাৎপর্য দাবি করে। যদিও রবীন্দ্রনাথ এ ভাষায় সংযোজন করেন অনন্য সৌন্দর্য।

এ ধারাবাহিকতায় এলো পাকিস্তান। আমাদের ‘ইউটোপিয়া’ পাকিস্তানে সংকট ঘনিয়ে উঠল রাষ্ট্রভাষা নিয়ে। যা শেষ পর্যন্ত রাষ্ট্র হিসাবে পাকিস্তানের ভবিষ্যৎকে মিছমার করে দেয়। রক্তাক্ত মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে জন্ম নিল আমাদের আজকের বাংলাদেশ।

বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন নিয়ে ভাবনার, চিন্তার, চেতনার পরিধি ক্রমাগত বাড়তেই থাকল। নানা ব্যাখ্যা ও বয়ান রচনাও চলতেই থাকে। কারণ, ভাষা আন্দোলনের মধ্য দিয়েই আমাদের ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল নিয়ে আলাদা স্বাতন্ত্র্য ও স্বভাব নিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়াবার ক্ষেত্রটি নিরন্তর দড় হতে থাকল।

ভাষা আন্দোলনই একমাত্র উপকরণ নয়। আরও অনেক ঘটনা ও ঘটনাপ্রবাহই আজকের ভিত্তি নির্মাণ করেছে। কিন্তু আমাদের প্রতিপাদ্য বিষয় সেই ঐতিহাসিক রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন।

ভাষা আন্দোলনের ওপর বিস্তর গবেষণা হয়েছে। হচ্ছে। এবং হতেই থাকবে। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি থেকে যেমন এ অসাধারণ ইতিহাসের ব্যাখ্যাদান করা চলছে, তেমনই ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত নেতা ও সৈনিকদের বহু কথা আজও রয়ে গেছে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে। রয়ে গেছে অকথিত ও অগ্রন্থিত। বহু প্রতিষ্ঠানের ভূমিকা রয়ে গেছে আচ্ছাদিত।

আবার বাংলাদেশের ভৌগোলিক আবহাওয়ার বাইরে, বিশেষ করে ভারতের আসাম রাজ্যের শিলচরেও বাংলা ভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য বুকের রক্ত ঝরিয়েছে বাঙালিরা। সে আত্মত্যাগও কম গৌরবের নয়। যেমন-তৎকালীন পশ্চিম পাকিস্তানেও বাংলা ভাষার জন্য হয়েছে তীব্র আন্দোলন। সেকথাও অনেকেরই অজানা।

এদিকে বাংলা ভাষা আন্দোলনের চরম ও পরম দিন খুনরাঙা একুশে ফেব্রুয়ারি ইউনেস্কো কর্তৃক স্বীকৃতি পেয়েছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে। বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর জন্য এ এক মহার্ঘ শ্লাঘার বিষয়।

বাংলা ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর বাইরে প্রবাসীদের হাত ধরে পৃথিবীর দেশে দেশে বয়ে চলেছে, বাংলা ভাষা ও সাহিত্যচর্চার নদী। যা আমাদের জন্য অত্যন্ত উপাদেয় অভিজ্ঞতা।

আমরা শত পুষ্পের বর্ণ, গন্ধ ও স্বাদ দিয়ে বুঝতে চেষ্টা করেছি জাতীয় জীবনের এ অবিস্মরণীয় ঘটনাটিকে। বহুমুখিনতার সংমিশ্রণে রচনা করতে চেয়েছি যৌক্তিক পাটাতন। এবং এমন কিছু স্মৃতিচারণ ও মূল্যায়ন এখনো রয়ে গেছে, হয়েছে যা আহরিত হয়নি। ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান, মনীষীদের আত্মানুসন্ধান, ভাষা আন্দোলনকেন্দ্রিক পত্রিকা ও কিতাবের একত্রীকরণ করতে গিয়ে জাতীয় ব্যক্তিত্বদের নিজস্ব উচ্চারণ, শহিদ মিনার, একুশের প্রথম সাহিত্য সংকলন, চিঠিপত্র এবং আত্মদর্শনের নতুন বিশ্লেষণ-কোনো কিছুই আমাদের মনোযোগের বাইরে রাখা ঠিক না।

আমাদের দেশে ভাষা আন্দোলনের শহিদ, নায়ক, নেতা ও সৈনিক যেমন আছেন তেমনি আছেন মেকি ভাষাসৈনিক এবং নিজ নিজ দলীয় ফ্যাক্টরিতে তৈরি ইতিহাসের নামে ভুষিমাল। সেগুলোকে আলাদা করতে হবে।

এ কথাও অনস্বীকার্য, আজকের বাংলাদেশে বাংলা ভাষা নিদারুণভাবে উপেক্ষিত। উচ্চবিত্ত শ্রেণি, মধ্যকোটির মানুষ এবং শিক্ষার ক্ষেত্রে ব্যবহারিক জীবনে বাংলার চেয়ে বড় হয়ে উঠেছে বিদেশি ভাষার আধিপত্য। আমরা উর্দুকে সরিয়ে হিন্দি ও ইংরেজির ফাঁস গলায় পরেছি। যা আমাদের জাতিগত আবেগ ও আকাঙ্ক্ষাকে অস্বীকার করেছে।

বাংলা একাডেমিও মূল কর্মটিকে শিকায় তুলে, জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে মেলানন্দে মাতোয়ারা।

মোট কথা সকল অসংগতির অবসান ঘটিয়ে উদ্বোধন করতে হবে সুপরিকল্পিত একক আয়োজনের। আর মন দিতে হবে সত্যনিষ্ঠায়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরও সংবাদ
© সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত 𝐛𝐚𝐧𝐠𝐥𝐚𝐝𝐚𝐤.𝐜𝐨𝐦-২০২৫, আমাদের প্রকাশিত সংবাদ, কলাম, তথ্য, ছবি, কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার দণ্ডনীয় অপরাধ।
Theme Customized BY LatestNews